সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেননি জুলাই যোদ্ধা মিনারুল
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৬-০৭-২০২৫ ০২:২৬:৪৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৬-০৭-২০২৫ ০২:২৬:৪৩ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
বাবা হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয়েছিল মিনারুল ইসলামের। দীর্ঘ আট বছরের অপেক্ষা শেষে স্ত্রী নূরেসান খাতুন শম্পা গর্ভে ধারণ করেছিলেন সন্তান। কিন্তু ভাগ্য নির্মমভাবে আঘাত হেনেছে। গত বছরের ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান মিনারুল। সন্তান জন্ম হলেও তার মুখটা দেখা হলো না আর। বাবার আদরও কখনো পাবে না নবজাতক সাইফান।
স্বামীর মৃত্যুর পর সময় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন নূরেসান। শোকে মুহ্যমান নূরেসান খাতুনের কোলজুড়ে ২ মাস ৯ দিন পর আসে একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান। স্বামীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা হয় মিনহাজুল ইসলাম সাইফান। বর্তমানে শিশুটির বয়স ৯ মাস। শহীদ মিনারুল ইসলামের (২৭) বাড়ি রাজশাহী নগরীর গুড়িপাড়া-পুরাপাড়া এলাকায়। বাবা বহু আগেই মারা গেছেন। পরিবারে রয়েছেন মা ডলি বেগম ও বড় দুই ভাই মো. সোহেল ও নাজমুল হক। দুই ভাই অটোরিকশা চালান, আর মিনারুল পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে।
২০ জুলাই দুপুরে আন্দোলনের উত্তাল মুহূর্তে গুলিবিদ্ধ হন মিনারুল। আহত অবস্থায় সহযোদ্ধারা হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। সন্ধ্যায় মিনারুলের ফোন থেকে একটি কল পেয়ে মিনারুলের সমন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই) সাব্বির জানতে পারেন— তিনি আর বেঁচে নেই। পরদিন মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে স্থানীয় কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা রজব আলী পরিবারের ওপর চাপ দেন মিনারুলের মৃত্যুকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে। এভাবে তড়িঘড়ি করে দাফন সম্পন্ন হয়। কিন্তু আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৩ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মিনারুলের ভাই নাজমুল হক।
গোদাগাড়ীর ফরাদপুর গ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন মিনারুলের স্ত্রী নূরেসান খাতুন। সন্তান জন্মের আগেই স্বামীর মৃত্যু তাকে ভেতরে ভেতরে ভেঙে দিলেও এখন ছেলেকেই ভবিষ্যৎ ভরসা হিসেবে আঁকড়ে ধরেছেন। রাজশাহীতে কর্মী সম্মেলনে অংশ নিতে এসে গত ১৮ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ফরাদপুরে যান। সাইফানকে কোলে নিয়ে আদর করেন এবং তার মাকে বলেন, ‘‘তুমি আমার মেয়ে, আর সাইফান আমার নাতি।’’ পরে জনসভায় মিনারুলের সাহসিকতা নিয়ে আবেগঘন ভাষায় স্মৃতিচারণ করেন তিনি। পানি ফেলেন চোখের।
ফরাদপুরে গিয়ে কথা হয় নূরেসান খাতুনের সঙ্গে। কোলে শিশুপুত্রকে নিয়ে কাঁপা গলায় বলেন, ‘‘আমার স্বামী থাকলে ছেলেটার ভবিষ্যৎটা অন্যরকম হতো। এখন ছেলেটাকেই আঁকড়ে বাঁচছি। বাবার বাড়িতেই থাকি, বাবাও দিনমজুর। সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই যেন ছেলেকে অন্তত মানুষ করতে পারি।’’ এরপর চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘‘স্বামীর হত্যার বিচার চাই। আর দেরি নয়।’’
নূরেসানের বাবা মো. সাইদুল বলেন, ‘‘আমার মেয়ের জামাইকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। নাতি প্রায়ই অসুস্থ থাকে, ভালো চিকিৎসাও করাতে পারি না। সরকার অনুদান দিয়েছে- এক অংশ পেয়েছে মিনারুলের মা, বাকিটা আমরা নাতির জন্য রেখেছি। এভাবে এতিম হয়ে যাওয়া শিশুর ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকার না হয়, সরকারের নজর যেন থাকে।’’ নূরেসানের মা নূরমহল বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘মেয়ের জামাইয়ের বুকে গুলি লেগেছে মানে আমার বুকেও লেগেছে। বিনা দোষে গুলি করে কেড়ে নিল আমাদের ছেলের জীবন। এখনো কোনো বিচার হয়নি। আমরা শেখ হাসিনার বিচার চাই।’’
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স